Google Blogger Guide A to Z

![]() |
Kolkata |
কলিকাতা অতিমহানগরী ডাকনাম: আনন্দনগরী
ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী
কলকাতা বা কোলকাতা ইংরেজি: Kolkata; আদি নাম: কলিকাতা; পুরনো ইংরেজি নাম: Calcutta হল পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর এবং ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কলকাতা শহরটি হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত।
এই শহর পূর্ব ভারতের শিক্ষা, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। কলকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম সচল বন্দর তথা দেশের প্রধান নদী বন্দর। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, কলকাতার জনসংখ্যা ৪,৪৯৬,৬৯৪।
জনসংখ্যার হিসেবে এটি ভারতের ৭ম সর্বাধিক জনবহুল পৌর-এলাকা। অন্যদিকে বৃহত্তর কলকাতার জনসংখ্যা ১৪,১১২,৫৩৬। জনসংখ্যার হিসেবে বৃহত্তর কলকাতা ভারতের ৩য় সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চল।
বৃহত্তর কলকাতার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচক (আনুমানিক) ৬০ থেকে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যবর্তী (ক্রয়ক্ষমতা সমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জিডিপি অনুযায়ী)। এই সূচক অনুযায়ী ভারতে কলকাতার স্থান মুম্বই ও নতুন দিল্লির ঠিক পরেই।
সুতানুটি, ডিহি কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে মূল কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। ১৭শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত এই গ্রামগুলির শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাটের অধীনস্থ বাংলার নবাবেরা। ১৬৯০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের কাছ থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করে।
এরপর কোম্পানি কলকাতায় একটি দুর্গবেষ্টিত বাণিজ্যকুঠি গড়ে তোলে। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলা কলকাতা জয় করেছিলেন। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানি আবার শহরটি দখল করে নেয়।
এর কয়েক দশকের মধ্যেই কোম্পানি বাংলায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করে এবং ১৭৯৩ সালে ‘নিজামৎ’ বা স্থানীয় শাসনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে এই অঞ্চলে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করে। কোম্পানির শাসনকালে এবং ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রত্যক্ষ শাসনকালের প্রথমার্ধ্বে কলকাতা ছিল ভারতের ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চলগুলির রাজধানী। ১৯শ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই কলকাতা ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র।
কলকাতার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, বিজ্ঞান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্রও কলকাতা শহর।
এখানে জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলির মধ্যে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় সংগ্রহালয় ও জাতীয় গ্রন্থাগারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ভারতীয় উদ্ভিদ সর্বেক্ষণ, ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি, ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থা, জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স, অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ও ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের মতো কয়েকটি পেশাদার বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলকাতাতেই অবস্থিত।
এই শহরে একাধিক ক্রিকেট মাঠ ও ফ্র্যাঞ্জাইজি আছে। কিন্তু ভারতের অন্যান্য শহরে ক্রিকেট বেশি গুরুত্ব পেলেও, কলকাতার অধিবাসীরা ফুটবল ও অন্যান্য খেলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।বলা হয়ে থাকে, ভারতবর্ষের ফুটবলের রাজধানী কলকাতা।
নাম-উৎপত্তি
কালীঘাট মন্দির, ১৮৮৭ খ্রি.; একটি মতে, "কালীক্ষেত্র" শব্দটি থেকে "কলিকাতা" নামটির উৎপত্তি
১৭শ শতাব্দীর শেষভাগে সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রাম নিয়ে কলকাতা শহরটি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ডিহি কলিকাতা নামটি থেকে কলকাতা নামটির উৎপত্তি।
"কলিকাতা" বা "কলকাতা" নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে মতান্তর রয়েছে:
একটি মতে, "কালীক্ষেত্র" (হিন্দু দেবী কালীর ক্ষেত্র) নামটি থেকে "কলিকাতা" বা "কলকাতা" নামটির উৎপত্তি।
মতান্তরে, বাংলা "কিলকিলা" (অর্থাৎ,"চ্যাপ্টা এলাকা") কথাটি থেকে "কলিকাতা" নামটির উৎপত্তি হয়।
অন্য এক মতে বাংলা খাল ও কাটা শব্দ দু’টির বিকৃতির ফলে কলকাতা নামটির উৎপত্তি ঘটে।
অপর মতে, এই অঞ্চলটি কলিচুন ও কাতা (নারকেল ছোবড়ার আঁশ) উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিল। সেই থেকেই কলিকাতা নামটির উৎপত্তি ঘটে।
বাংলায় কলিকাতা বা কলকাতা নামটি প্রচলিত হলেও ইংরেজি ভাষায় এই শহর আগে ক্যালকাটা (ইংরেজি: Calcutta) নামে পরিচিত ছিল। ২০০১ সালে নামের বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে সমতা রেখে ইংরেজিতেও শহরের নাম কলকাতা (ইংরেজি: Kolkata) রাখা হয়।
কলকাতার ইতিহাস
প্রাক-ব্রিটিশ যুগ
ফোর্ট উইলিয়াম, কলকাতা, উইলিয়াম উড অঙ্কিত, ১৮২৮ খ্রি.
কলকাতার নিকটবর্তী চন্দ্রকেতুগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে এই অঞ্চলটি বিগত দুই হাজার বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে জনবসতিপূর্ণ। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একাধিক গ্রন্থে হুগলি নদীর তীরবর্তী কলিকাতা গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিপ্রদাস পিপলাইয়ের মনসাবিজয় কাব্য (১৪৯৫ খ্রি.), মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিকঙ্কণ চণ্ডী (১৫৯৪-১৬০৬ খ্রি.), সৈয়দ আলাওলের পদ্মাবতী (১৬৪৫–৫২ খ্রি.), কৃষ্ণরাম দাসের কালিকামঙ্গল (১৬৭৬–৭৭ খ্রি.), সনাতন ঘোষালের ভাষা-ভাগবত (১৬৭৯–৮০ খ্রি.) ও কৃষ্ণদাসের নারদপুরাণ (১৬৯২ খ্রি.)।
১৫৮২ সালে রাজা টোডরমলের নির্দেশে সমগ্র বাংলা সুবা (প্রদেশ) জরিপ করে ওয়ালিশ-ই-জমা তুমার নামে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি (১৫৯০ খ্রি.) গ্রন্থে উদ্ধৃত এই তালিকাটিতে "কলিকাতা" গ্রামটির উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও গোলাম হোসেন সেলিম রচিত রিয়াজ-উস-সালাতিন (১৭৮৬ খ্রি.) নামক একটি ফার্সি গ্রন্থেও "কলিকাতা" গ্রামের উল্লেখ রয়েছে।
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দী
ফোর্ট উইলিয়াম, কলকাতা, ১৭৩৫
সেকালের কলকাতা বন্দরে জাহাজ থেকে হাতি নামানোর দৃশ্য, হারপারস উইকলি থেকে, ১৮৫৮ খ্রি.
চিৎপুর রোডের (অধুনা রবীন্দ্র সরণি) দৃশ্য; উইলিয়াম সিম্পসনের ইন্ডিয়া এনসিয়েন্ট অ্যান্ড মর্ডার্ন বইতে প্রকাশিত হয়, ১৮৬৭।
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে বর্তমান কলকাতা অঞ্চলটি সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও ডিহি কলিকাতা নামে তিনটি গ্রামে বিভক্ত ছিল। গ্রাম তিনটি ছিল বাংলার নবাবের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে। এই সময় প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ওলন্দাজ, পর্তুগিজ ও ফরাসি শক্তিগুলিকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ গোবিন্দপুরে একটি দুর্গনির্মাণের পরিকল্পনা করেন।
১৭০২ সালে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয়। এই দুর্গটি ছিল একাধারে একটি সেনানিবাস ও আঞ্চলিক সেনা কার্যালয়। কলকাতা "প্রেসিডেন্সি সিটি" ঘোষিত হয় এবং পরে বাংলা প্রেসিডেন্সির সদরে পরিণত হয়। এই সময় ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে কোম্পানির ছোটোখাটো সংঘর্ষ লেগেই থাকত।
ফরাসিদের ঠেকাতে ১৭৫৬ সালে কোম্পানি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের সংস্কার শুরু করে। বাংলার তদনীন্তন নবাব সিরাজদ্দৌলা এই সামরিক আয়োজনের প্রতিবাদ জানালেও ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি। ক্ষুব্ধ সিরাজ এরপর কলকাতা আক্রমণ করে দুর্গ দখল করে নেন এবং ইংরেজদের কলকাতা থেকে বিতাড়িত করেন।
এরপরই ইংরেজরা কুখ্যাত অন্ধকূপ হত্যার গল্প রটনা করে। অবশ্য এক বছর পরে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানির বাহিনী কলকাতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৭৭২ সালে কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষিত হয়। পরবর্তীকালে ১৮৬৪ সাল থেকে ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী অধুনা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের শৈলশহর সিমলায় সাময়িকভাবে স্থানান্তরিত করার রেওয়াজ শুরু হয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে কলকাতার চারপাশের জলাভূমিগুলি বুজিয়ে ফেলা হয়। হুগলি নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠে গভর্নমেন্ট প্লেস বা অফিসপাড়া। লর্ড ওয়েলেসলির (গভর্নর-জেনারেল ১৭৯৭-১৮০৫) শাসনকালে শহরের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছিল।
তার আমলেই কলকাতার অধিকাংশ সরকারি ভবনের নির্মাণকার্য শুরু হয়। এই ভবনগুলির বিশালতা ও স্থাপত্যসৌকর্যই কলকাতাকে "প্রাসাদ নগরী" বা "সিটি অফ প্যালেসেস" সম্মান প্রদান করেছিল।
বাংলার নবজাগরণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান থেকে তোলা কলকাতা বন্দরের দৃশ্য, ১৯৪৫ খ্রি.
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কলকাতা শহর দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। শহরের দক্ষিণে যে অংশে ব্রিটিশরা বাস করতেন সেটিকে বলা হত হোয়াইট টাউন এবং উত্তরে যে অংশে ভারতীয়েরা বাস করত সেটিকে বলা হত ব্ল্যাক টাউন।
১৮৫০-এর দশক থেকে কলকাতা শহর বস্ত্রবয়ন ও পাটশিল্পে বিশেষ সমৃদ্ধি অর্জন করতে শুরু করে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার এখানে রেলপথ ও টেলিগ্রাফ প্রকল্পের মতো পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেন। ব্রিটিশ ও ভারতীয় সংস্কৃতির মিশ্রণে শহুরে বাঙালিদের মধ্যে এক নব্য বাবু শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল। এই বাবুরা ছিলেন সাধারণত উচ্চবর্ণীয় হিন্দু, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও সংবাদপত্রের পাঠক।
পেশাগতভাবে এঁরা ছিলেন জমিদার, সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষক। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত যে যুগান্তকারী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন বাঙালি সমাজের চিন্তাধারা ও রুচির আমূল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল তার পটভূমিও ছিল এই কলকাতা শহর। বাংলার নবজাগরণ শুধু বাংলা নয়, সমগ্র ভারতের পথপ্রদর্শক হয়েছিল।
শহিদ মিনার থেকে কলকাতার বিস্তৃত দৃশ্য, ১৮৩২, জ্যাকব জনসন
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
কলকাতার রাস্তায় প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের দাঙ্গায় নিহতদের মৃতদেহ, ১৯৪৬ খ্রি.
১৮৮৩ সালে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেন। এটিই ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সম্মেলন।[২৫] এরপর ধীরে ধীরে কলকাতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
বিশেষত বিপ্লবী সংগঠনগুলির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয় কলকাতা শহর। ১৯০৫ সালে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতায় ব্যাপক গণবিক্ষোভ ও ব্রিটিশ দ্রব্য বয়কট (স্বদেশী আন্দোলন) শুরু হয়। এই সব গণআন্দোলনের তীব্রতা এবং দেশের পূর্বভাগে অবস্থিত কলকাতা থেকে দেশ শাসনের প্রশাসনিক অসুবিধার কারণে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯২৩ সালে ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্টের অধীনে কলকাতার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কর্তৃপক্ষ কলকাতা পৌরসংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতাত্তোর যুগ
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলে ব্রিটিশ বাংলা প্রেসিডেন্সির হিন্দুপ্রধান পশ্চিমাঞ্চল পশ্চিমবঙ্গ নামে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। কলকাতা এই রাজ্যের রাজধানীর মর্যাদা পায়।
এই সময় দেশভাগ-জনিত তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু শরণার্থীদের ব্যাপক হারে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ রাজ্যের তথা শহরের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে।
এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় একাধিক কার্যকরী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন।
বামফ্রন্টের একটি জনসভা
স্বাধীনতার পর ১৯৫১ ও ১৯৫৬ সালে কর্পোরেশন আইন সংশোধন করা হয়। ১৯৮০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার শেষবার এই আইন সংশোধন করেন। সংশোধিত নতুন আইন কার্যকর হয় ১৯৮৪ সালে।
১৯৯২ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭৪তম সংশোধনী বিল পাস হলে কলকাতা পৌরসংস্থা সামাজিক ন্যায় ও আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষমতা পায়। ২০০১ সালে কলকাতার ইংরেজি নাম ‘ক্যালকাটা’ বদলে ‘কলকাতা’ করা হলে ‘কলিকাতা পৌরসংস্থা’ নামের পরিবর্তে ‘কলকাতা পৌরসংস্থা’ নামটি চালু হয়।
১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগে কলকাতাকে ছাপিয়ে মুম্বই (তৎকালীন নাম বোম্বাই) ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহরের শিরোপা অর্জন করে। ১৯৯০-এর দশকে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতি শহরের অর্থনৈতিক হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে অনেকাংশে সহায়ক হয়। ২০০০ সাল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প কলকাতার অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করেছে। শহরের উৎপাদন ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।
ভূগোল
পূর্ব কলকাতা জলাভূমি
রবীন্দ্র সরোবর হ্রদ।
কলকাতা শহর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বদিকে ২২°৩৩′ উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮°২০′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের গড় উচ্চতা ১.৫ মিটার (৫ ফুট) থেকে ৯ মিটারের (৩০ ফুট) মধ্যে। উত্তর-দক্ষিণে শহরের বিস্তার হুগলি নদীর পাড় বরাবর। শহরের বেশিরভাগ এলাকাই আদতে ছিল জলাজমি।
শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সব জলাজমি ভরাট করে বসতযোগ্য করে তোলা হয়। অবশিষ্ট জলাভূমি এখন 'পূর্ব কলকাতা জলাভূমি' নামে পরিচিত। এই জলাভূমিটি রামসার কনভেনশন অনুযায়ী একটি "আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন জলাভূমি"।
সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমির বেশিরভাগ এলাকার মতো, কলকাতার মাটি ও জল মূলত পলিজ প্রকৃতির। শহরের মাটির তলায় কাদা, পলি, বিভিন্ন ক্রমের বালি ও নুড়ি নিয়ে গঠিত কোয়্যাটারনারি যুগের পললস্তর দেখা যায়।
পললস্তরগুলি দুটির কাদার স্তরের মধ্যে বদ্ধ রয়েছে। নিচের কাদার স্তরটির গভীরতা ২৫০ মিটার (৮২০ ফুট) থেকে ৬৫০ মিটার (২,১৩৩ ফুট) এবং উপরের কাদার স্তরটির গভীরতা ১০ মিটার (৩৩ ফুট) থেকে ৪০ মিটার (১৩১ ফুট)।
নগরাঞ্চলের গঠন
গঙ্গার পশ্চিম কূল থেকে দৃশ্যমান রবীন্দ্র সেতু (হাওড়া ব্রিজ)
বৃহত্তর কলকাতার আয়তন ১,৮৮৬.৬৭ কিমি২ ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী, মোট ৭২টি বড়ো শহর এবং ৫২৭টি ছোটো শহর ও গ্রাম এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, কলকাতা পৌরসংস্থা সহ চারটি পৌরসংস্থা, ৩৯টি পুরসভা ও ২৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত বৃহত্তর কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।
বৃহত্তর কলকাতার শহরতলি এলাকাগুলি উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও নদিয়া জেলার অন্তর্গত। কলকাতা পৌরসংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার আয়তন ২০৮.৬ কিমি২ (৮১ মা২)। পৌর এলাকার প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ।
চৌরঙ্গি থেকে দৃশ্যমান কলকাতার দিগন্তরেখা
রাতে আলোকোজ্জ্বল কলকাতার নদীতীর।
সন্ধ্যার প্রাক্কালে হুগলি নদীর উপর বিদ্যাসাগর সেতু
উত্তর কলকাতা
উত্তর কলকাতা হল কলকাতার প্রাচীনতম অংশ। ১৯শ শতাব্দীর স্থাপত্যশৈলী, জীর্ণ প্রাসাদোপম বাড়িঘর, ঘিঞ্জি বস্তি, জনাকীর্ণ বাজার ও অজস্র সরু সরু গলিপথ শহরের এই অংশের বৈশিষ্ট্য শ্যামবাজার, হাতিবাগান, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, রাজাবাজার, শোভাবাজার, শ্যামপুকুর, সোনাগাছি, কুমারটুলি, বাগবাজার, জোড়াসাঁকো, চিৎপুর, পাথুরিয়াঘাটা, কাশীপুর, কেষ্টপুর, সিঁথি, বেলগাছিয়া, জোড়াবাগান ও দমদম এলাকাগুলি উত্তর কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।
মধ্য কলকাতা
মধ্য কলকাতা হল শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ (বিবাদীবাগ; পূর্বতন নাম ডালহৌসি স্কোয়ার), এসপ্ল্যানেড, স্ট্র্যান্ড রোড, চৌরঙ্গি, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট (বইয়ের বাজারের জন্য ‘বইপাড়া’ নামেও পরিচিত), শিয়ালদহ, তালতলা, জানবাজার, বউবাজার, এন্টালি, চাঁদনি চক, ধর্মতলা, টেরিটি বাজার, বো ব্যারাকস, মল্লিকবাজার , পার্কসার্কাস , বাবুঘাট প্রভৃতি এলাকা মধ্য কলকাতার অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সচীবালয়, জেনারেল পোস্ট অফিস, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, উচ্চ আদালত, লালবাজার পুলিশ সদর দফতর সহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয় এখানেই অবস্থিত।
দক্ষিণ কলকাতা
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর দক্ষিণ কলকাতার বৃহত্তর অংশের বিস্তার ঘটে। বালিগঞ্জ, আলিপুর, নিউ আলিপুর, শরৎ বসু রোড, ভবানীপুর, কালীঘাট, ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, নাকতলা, যোধপুর পার্ক, লেক গার্ডেনস, গলফ গ্রিন, যাদবপুর, গড়ফা, কালিকাপুর, হালতু, নন্দীবাগান, সন্তোষপুর, বাঘাযতীন, গাঙ্গুলিবাগান, গড়িয়া, কামালগাজী, রানিকুঠি, বিক্রমগড়, বিজয়গড়, বাঁশদ্রোণী ও কুঁদঘাট নিয়েই দক্ষিণ কলকাতা।
পূর্ব কলকাতা
বিধাননগর, রাজারহাট, ট্যাংরা, তোপসিয়া, কসবা, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, পিকনিক গার্ডেন, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা, ফুলবাগান, কৈখালি, লেকটাউন প্রভৃতি এলাকা পূর্ব কলকাতার অন্তর্গত। এই এলাকাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকা সাম্প্রতিক নগরায়নের উদাহরণ।
বৃহত্তর কলকাতা অঞ্চলের দু’টি পরিকল্পিত টাউনশিপ হল শহরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিধাননগর বা সল্টলেক এবং বিধাননগরের পূর্বে অবস্থিত রাজারহাট নিউটাউন। ২০০০-এর দশকে বিধাননগরের সেক্টর ফাইভ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলির কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল, সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকা, রবীন্দ্র সেতু, ট্রাম লাইন, বিদ্যাসাগর সেতু
Kolkata
Please give the details of Kolkata bowbazar metro railway crisis in Bengali
৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করল বাবা ! খুন
গুগল ব্লোগ্গিং করে মাসিক আয় করুন ৫০,০০০ টাকা ! সম্পূর্ণ বিস্তারিত ।
লকডাউনের সময় 150 উপায়ে ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করুন
কোয়ারানটিনে হোটেলে সেক্স! যৌনকেচ্ছাই ছড়াল করোনা...
'বিকাশ ভুল ছিল,দেশের আবর্জনা সাফ হলো ! ভালোই হলো ।
সুখবর, সহস্রাধীক সরকারি চাকরী শীঘ্রই এপলাই করুন।
আসতেসে ঘূর্ণি বাতাস 'আমফান'পশ্চিম বঙ্গ এবং আসামের কোন জিলায় জারি হয়েছে সতর্কবাণী?
নগদ অর্থ উপার্জন করতে চান?? 60 টি উপায় ।
আসাম NHM চাকরি, আসামIrrigation Result 2020
কীভাবে ইউটিউব দিয়ে অর্থোপার্জন করবেন?
অর্ণব গোস্বামী: টিভি রেটিংয়ের জন্য নাটক ?
৩ মে-র পর কি লকডাউন উঠছে? আজ বৈঠকে কী বললেন রাজনাথ সি
29 বছরের ছেলে 60 বছরের মা'কে ধর্ষণ করেছে! পালঘর লিনচিং !
9 জন বন্ধু লকডাউনে একটি নাবালিক মেয়েকে গণধর্ষণ করেছে
The Great Khali Bangla Biography দ্য গ্রেট খালি বাংলা জীবনী
kolkata weather
kolkata news
kolkata lockdown
kolkata map
kolkata tourism
kolkata city
Comments
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment